আবহমান বাংলা ও বাঙালির ঐতিহ্য, জাতিসত্ত্বা ও অস্তিত্ত্ব রক্ষার একটি মঞ্চ।

পান্থপাদপকী এবং কেন?

সারা পৃথিবী জুড়ে ৩৩ কোটি বাঙালির বাস। এর মধ্যে ১৭ কোটি মানুষের নিজস্ব বাসভূমি আছে। সে বাসভূমির নাম বাংলাদেশ। বাকি ১৬ কোটি বাঙালি, কচুরীপানার মত ভেসে বেড়াই। এর মধ্যে পশ্চিম বাংলায় প্রায় ১০ কোটি ও বাকি ৬ কোটি বাঙালি ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজ্য ও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বসবাস করে। ৩৩ কোটি মানুষ এক ভাষায় কথা বলে, এক গান গায়, একই খাদ্যভ্যাসে অভ্যস্ত তবুও এক অনিবার্য বিচ্ছিন্নতা আমাদের দুর্বল থেকে দুর্বলতর করছে প্রতিদিন।
আমরা বিশ্বাস করি, মেধাশক্তি, সৃজনশীলতা, ঔদার্য্য, দেশপ্রেম ইত্যাদি গুণাবলীর বিচারে – বাঙালি আজও পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ জনগোষ্ঠী। এই ৩৩ কোটি বাঙালিকে এক সূত্রে বাঁধতে পারলে অমিত শক্তিধর হতে পারি আমরা। বাংলার সংস্কৃতির ঐতিহ্য তার মূল্যবান লোকাচারগুলি, আমাদের মনীষীদের কথা, বাঙালির স্বাধীনতার জন্য আপোষহীন লড়াই, ভারতের জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম ও বাংলাদেশের মুক্তি যুদ্ধের ইতিহাস, বাঙালির চারিত্রিক দৃঢ়তা প্রেমের সাক্ষ্যবহন করে। বাঙালির এই কীর্তিকাহিনী পৌঁছে দিতে হবে – নবতম প্রজন্মের কাছে।
‘পান্থপাদপ’ চায় বাংলার সাহিত্য, সংস্কৃতি, ক্রীড়া, বিজ্ঞানসাধনা ইত্যাদির ক্ষেত্রে বাঙালি তার হৃত গৌরব পুনরুদ্ধার করুক। আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও সুন্দর লোকাচারগুলি আবার চর্চার মধ্যে ফিরে আসুক। সারা পৃথিবীর বাঙালির কাছে আমরা কতগুলি বার্তা পৌঁছে দিতে চাই।
(ক) পৃথিবীর যে প্রান্তেই বাস করুন, যতদিন ধরে থাকুন বাড়িতে বাংলায় কথা বলুন।
(খ) মাসে অন্তত একদিন বাংলার নিজস্ব খাবার রান্না করে খান।
(গ) আপনার সন্তানদের হাতে শিবরাম চক্রবর্তী, পরশুরাম, বনফুল, ত্রৈলোক্যনাথ, উপেন্দ্রকিশোর, সুকুমার রায়, সত্যজিৎ রায় প্রমুখ সাহিত্যিকদের বই তুলে দিন।
(ঘ) রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, দ্বিজেন্দ্রলাল, অতুলপ্রসাদ ও রজনী —- থেকে শুরু করে বাংলার নগর সঙ্গীতের পরম্পরা সম্পর্কে সন্তানদের শোনার অভ্যাস তৈরি করুন।
(ঙ) উৎসব গুলির সময় পোশাক পরিচ্ছদে ও লোকাচারে প্রকৃত বাঙালির পরিচয় বহন করুন।
(চ) বাংলার মনীষীদের কথা সন্তানদের বলুন। তাদের জীবনী গ্রন্থগুলি বাড়িতে রাখুন। দুই স্বাধীনতা সংগ্রামে (ভারতের জাতীয় মুক্তি আন্দোলন ও বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ) বাঙালির অবদান ও আত্মদানের কথা সন্তানদের কাছে তুলে ধরুন। বিশেষতঃ বাংলাদেশ মুক্তি যুদ্ধে বাঙালির অসাম্প্রদায়িক জাতিসত্তা, ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে, ৩০ লক্ষ শহীদের জীবনের বিনিময়ে অর্জিত নতুন রাষ্ট্র ‘বাংলাদেশ’ এর কথা বারবার উচ্চারিত হোক। সেই সঙ্গে আমাদের শিলচরে ১৯৬১ সালে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ও তার শহীদদের কথা নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরুন।
সারা পৃথিবীর সৃষ্টিশীল বাঙালির কাছে ‘পান্থপাদপ’ পৌঁছতে চায়। সাহিত্য সংস্কৃতি, বিজ্ঞান সাধনা ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে বাঙালির নবতম উদ্যোগগুলিকে আমরা পৌঁছে দিতে চাই সারা পৃথিবীর বাঙালির কাছে। এই যোগাযোগ এবং আদান প্রদান ‘পান্থপাদপ’ এর অন্যতম প্রধান দায়িত্ব।

‘পান্থপাদপ’ এর আবেদন –
ইতিমধ্যে আমরা এই প্রকল্প রূপায়নের জন্য শুভানুধ্যায়ীদের আর্থিক সহযোগিতায় জমি কেনা ও নির্মান কার্য শুরুর জমি সংক্রান্ত যাবতীয় প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করতে পেরেছি। ভবিষ্যতে আরো জমিরও প্রয়োজন হবে। এই বিশাল প্রকল্পের রূপায়নে আমরা অনেক মানুষের সাহায্যের উপর আস্থা রাখি। আমরা বিশ্বাস করি ৩৩ কোটি বাঙালির একটি অংশের কাছে পৌঁছতে পারলে এই স্বপ্ন পূরণ সম্ভব।

গত এক বছরের বেশি সময ধরে ‘পান্থপাদপ’ একটি ফেসবুক পাতার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পৃথিবীর অন্তত ৬টি দেশের বাঙালিদের কাছে একটি বার্তা পৌঁছতে পেরেছে। প্রবাসী বাঙালীদের একটি বড় অংশ আর্থিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এবিষয়ে আইনগত প্রক্রিয়াগুলি দ্রুত সম্পন্ন করা কাজ প্রায় শেষের মুখে। আমরা পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা, ভারতবর্ষের অন্তত সাতটি রাজ্যে মোটিভেশান ক্যাম্প করার প্রস্তুতি নিয়েছি। ইউরোপের ও কয়েকটি দেশে এই ক্যাম্পের আয়োজন করা হবে। উদ্যোগ নিয়েছেন প্রবাসী বাঙালী সংগঠনগুলি। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি সকলের শুভেচ্ছায়, ৩৩ কোটি বাঙালিকে একসূত্রে বাঁধার এই স্বপ্ন পূরণ হবেই

 

যাদের একনিষ্ঠায় 'পান্থপাদপ' গড়ে উঠছে

শ্রী শুভেন্দু মাইতি

পান্থপাদপ যার স্বপ্ন প্রকল্প, যিনি পান্থপাদপের কান্ডারী

শ্রী শুভেন্দু মাইতি, সারাজীবন গান আঁকড়ে থাকা মানুষ, যিনি অকপটে বলতে পারেন “কিছু না হওয়ার সাধনায় সিদ্ধিলাভ করেছি”। নিজেকে ‘গানের মজুর’ বলে পরিচয় দেন তিনি। নয় এর দশকে বাংলা গানের যে নব জোয়ার আসে, তিনি তার ভগীরথ। সেই পথ ধরে বাংলা গানের জগতে এসেছে কবির সুমন, নচিকেতা, লোপামুদ্রা, মৌসুমী ভৌমিক,কাজী কামাল নাসের, গৌতম ঘোষাল, শ্রীকান্ত আচার্য, অঞ্জন দত্ত প্রমুখ শিল্পী।পায়ে হেঁটে ঘুরে বেড়িয়েছেন বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, মেদিনীপুর, উত্তরবঙ্গ, ত্রিপুরা এবং বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে। সংগ্রহ করেছেন সঙ্গীতের বীজ, সংরক্ষণ করেছেন পরমযত্নে। লোকসঙ্গীত গবেষণার জন্য প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘লালন অ্যাকাডেমী ‘ । তিনি একাধারে কবি, গীতিকার, সুরকার, নাট্যকার,গবেষক, প্রাবন্ধিক এবং সেই সঙ্গে গায়ক। সংস্কৃতির প্রতিটি অঙ্গনে তাঁর অবাধ বিচরণ। লোকশিল্পীরা তাঁকে পরমাত্মীয় মনে করেন। একই সঙ্গে নাগরিক শিল্পীদের কাছেও সর্বজনগ্রাহ্য ব্যক্তিত্ব।
আজীবন স্বপ্ন দেখা মানুষ, জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তিনি “পান্থপাদপ” এর স্বপ্ন দেখলেন। সারা বিশ্বের বাঙালিকে একসূত্রে বাঁধার স্বপ্ন দেখলেন।
তিনি বলেন , “যে ভাষায় ৩৩ কোটি মানুষ এক ভাষায় কথা বলে, গান করে, সংস্কৃতির আদান প্রদান করে, সেই বাঙালির এক গৌরবময় অধ্যায় আছে – তার সাহিত্যে, সঙ্গীতে, চিত্রকলায়,ক্রীড়াক্ষেত্রে, দেশপ্রেমে,সমাজ সংস্কারে, চিকিৎসা বিজ্ঞানে, লোকাচার -যা অন্যের কাছে অনুকরণীয়। কিন্তু আজ বিচ্ছিন্নতা ও চর্চার অভাবে বাঙালি তার পুরনো ঐতিহ্য কে ভুলতে বসেছে”।
স্বপ্নের ফেরিওয়ালা, শুভেন্দু মাইতি এই পান্থপাদপ এর মাধ্যমে বাঙালির হারিয়ে যাওয়া এই গৌরবময় অধ্যায়গুলি ধীরে ধীরে নতুন প্রজন্মের মধ্যে চর্চার মধ্যে আনা এবং বাঙ্গালির জাতিসত্তার সংরক্ষণ করতে চান। তিনি এই স্বপ্ন প্রকল্পের প্রাণপুরুষ এবং প্রধান উপদেষ্টা

তাপসী চন্দ

তাপসী চন্দ

সভাপতি

জয়শ্রী সেনগুপ্ত

জয়শ্রী সেনগুপ্ত

সহ সভাপতি

মহাদেব দাস

মহাদেব দাস

সচিব

চন্দন হীরা

চন্দন হীরা

সহকারী সচিব

অশোক সরকার

অশোক সরকার

কোষাধ্যক্ষ

অনির্বাণ মাইতি

অনির্বাণ মাইতি

সদস্য

নীলাদ্রি দত্ত

নীলাদ্রি দত্ত

সদস্য